৩৩ বছর হাতের নখ কাটেনি ফুলবাড়ীর যুবক অরুণ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : মানুষ সখের বশে কত কিছুই না করে। কিন্তু এই সখ যদি হয় একটু ব্যতিক্রম তবে কেমন হয়। এমন শখ থেকে ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসাকে চিরন্তন রূপ দিতে ৩৩ বছর ধরে বাম হাতের আঙ্গুলের নখ কাটেনি অরুণ কুমার সরকার (৪০) নামে এক যুবক। দির্ঘদিন ধরে নখ না কেটে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন তিনি। কেবল নখের কারণে এলাকায় দর্শনীয় পুরুষে পরিণত হয়েছে সে। অরুণ সরকারের নখগুলো দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সের মানুষ ভীড় জমান।
অরুণ কুমার সরকার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর লক্ষীপুর গ্রামের রবীন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। শুরুর দিকে বাবা-মা নখ রাখা নিয়ে আপত্তি করেছিলেন। ভাবতেন হয়তো শারীরিক সমস্যা হবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারাও তা মেনে নিয়েছেন।
জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে অরুণ যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তখন কয়েক সপ্তাহ নখ না কাটায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাকে নখ কাটার কথা বলেন। কিন্তু কৌতুহলবশত নখ আরো একটু বড় হলে কেমন লাগে, সেটা দেখার চিন্তা করে লুকিয়ে নখ রাখা শুরু করে অরুণ। সামান্য বড় হতেই নখের প্রতি ভালবাসা (মায়া) জন্মায় তার। সেই ভালবাসাকে লালন করতে যেয়ে সে নখ কাটা বন্ধ করেই দেয়। আর সেখান থেকেই শুরু। তারপর দেখতে দেখতে ৩৩ বছরে নখগুলো গাছের ডালের মত আঁকাবাঁকা হয়ে বড় হয়েছে।
বর্তমানে অরুণের বাম হাতের মধ্যমা আঙুলের নখ লম্বায় ১১ ইঞ্চি, অনামিকা ১৫ ইঞ্চি এবং কনিষ্ঠা ১৩ ইঞ্চি এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দেড় ইঞ্চি এবং তর্জনী দুই ইঞ্চি। লোকমুখে শুনে অরুণের এই নখ একনজর দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই আসেন।
অরুণ জানায়, হাতে নখ রাখার ব্যাপারটা হঠাৎ করেই শখের বসে শুরু হয়। প্রথম প্রথম অরুণের বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন তার নখ রাখার ব্যাপারে বাধা দিলেও পরে তারাও তা মেনে নেন। এ অবস্থায় অনেক বছর কেটে গেল, তার বামহাতে রাখা নখগুলো পর্যায়ক্রমে বড় হতে থাকে। একপর্যায়ে ২০০৩ সালে বিয়ে করার পর তার ঘরে এক মেয়ে সন্তান ও এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। বর্তমানে লক্ষীপুর বাজারে তার ছেলের নামে ‘কান্না ডিজিট্যাল ফটো স্টুডিও’ নামে একটি দোকান করেছেন। সেখানে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ এজেন্সি রয়েছে তার। ছবি তোলা ও ডিস সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন।
অরুণ আরও জানায়, বড় বড় নখ তার কাজের কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে না। পেশায় ফটোগ্রাফার অরুণের বাজারে একটি স্টুড়িও দোকান রয়েছে। ছবি তোলা, কম্পিউটার চালানো কোন সমস্যা হয় না।
প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও এখন আর তার তেমন কোনো সমস্যা হয় না। নখগুলোর প্রতি তার অনেক ভালোবাসা জন্মেছে। সে কারণে তার নখগুলো আর কখনো কাটবেন না বলে জানায় সে। যদি কোন কারণে এই নখের কোনো অংশ একটু ভেঙে যায়, তাতেই সে খুব কষ্ট পায়।
আরও পড়ুনঅরুণ জানায়, শখের নখগুলি এখন গৌরবের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নখ দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই আসছেন। কোথাও বেড়াতে গেলে নখগুলো দেখার জন্য মানুষ ভীড় জমায় এবং অনেকে অনেক কথা জানতে চায়। তাতেই ভালো লাগে তার।
তবে শখের এই নখ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা সে ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর বলেন, দীর্ঘদিন নখ রাখা ঠিক নয়, কারণ নখের ভিতর ময়লা ঢুকে স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। এছাড়া নখ উষ্ঠে গিয়ে আঙুলের ক্ষতি হতে পারে। তাই এই রকম শখ থেকে বিরত থাকাই ভালো।
মন্তব্য করুন