ভিডিও শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

ওষুধের দাম অনিয়ন্ত্রিত

ওষুধের দাম অনিয়ন্ত্রিত

ওষুধের দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। মাত্র ক’দিন আগেই রাজধানীতে ওষুধ কিনতে না পারায় এক রোগীর আত্মহননের খবর আলোচনায় উঠে আসে। এ ছাড়া মাঝে মধ্যেই পথে ঘাটে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ওষুধ কেনার জন্য সাহায্য চান অনেকে। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৩ শতাংশ বা আড়াই কোটি মানুষ খরচের ভয়ে চিকিৎসা থেকে দূরে থাকেন।

ওষুধের দাম এখন ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে, যা মানুষকে আরও অস্থির করে তুলছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ সেক্টরে দামের ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা চলছে তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কারণ ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে পত্র-পত্রিকার তথ্য মতে, রোগী বা ওষুধের ভোক্তাদের অভিযোগের সূত্র ধরে ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা যায় বিচিত্র সব কান্ড।

কেবল ওষুধের দাম বৃদ্ধি নয়, এর সঙ্গে বেরিয়ে আসে একই ওষুধের একেক কোম্পানির একেক দামের চিত্র। 
এ ছাড়া এই নিয়ে কয়েকদফা ওষুধের দাম বাড়লো সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত ভাবে। এ ছাড়াও ফার্মেসিভেদে দামের মূল্য পার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো ওষুধের ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণও রাখা  হয়। খবরে প্রকাশ, গত মাসেও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে ব্যথানাশক টেরাক্স ১০ প্রতিটি ১২ টাকায় বিক্রি হতো।

একই ওষুধ এখন ৮ টাকা বেড়ে ২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। টেরাক্স ১০ মূলত অস্ত্রোপচার পরবর্তী মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথায় ব্যবহার করা হয়। ৫০ পিসের এক বক্স ওষুধের দাম এক মাসের ব্যবধানে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। আর সময়ের ব্যবধানে রোগীকে ৪০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ইনসেপ্টার অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত উইন্ডেল গ্যাস রেস্পিরেটর সল্যুসনের তিন এমএলের বোতলের দাম ২০ টাকা থেকে সাড়ে ২৫ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

একই কোম্পানির অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত বুটিকট নেবুলাইজার সাসপেনশন বুডেসোনাইড দুই এমএল’র দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সিজ (বিডি) লিমিটেড হিউমুুলিন এন ইনজেকশন ৩ মিলি কুইকপেন ৫টির এক প্যাকের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। বেড়েছে প্রায় তিন শতাংশ।

আরও পড়ুন

একই কোম্পানির ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসায় ইনজেকশন হিউমুলিন আর ৩ মিলি কুইকপেনের দাম ৮৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৯০ টাকা। শুধু ওষুধ নয়, সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই দাম কতটা যৌক্তিকভাবে বেড়েছে, সেটাই প্রশ্ন। পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও মূল্যস্ফীতির উল্ল্ম্ফন ঘটেছে। বস্তুত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিম্ন আয়ের মানুষকে চরম দুরবস্থায় নিপতিত করেছে।

দু:খজনক হলেও সত্য, দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে; অথচ এ ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ভূমিকা উদাসীনতায় ঢাকা। বস্তুত ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হলে রোগী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উভয়ের স্বার্থই রক্ষা হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকান্ড ঐশ্বরিক দায়িত্ব হিসেবে ভাবলে রোগীদের ভোগান্তি অনেক কমে যেত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু যুগ-পরিবর্তনের হাওয়ায় আমাদের মানসিকতার আমূল পাল্টে গেছে। চিকিৎসা এখন আর সেবাধর্মী কাজ নয়, এটি পরিণত হয়েছে বাণিজ্যের প্রধান উপকরণে, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ওষুধের দাম নিয়ে এমন টানা হেঁচড়া দেশের বিপুল সংখ্যক সাধারণ রোগীর স্বার্থে এ তৎপরতা বন্ধ হওয়া উচিত।

ওষুধের দাম যৌক্তিক রাখতে হবে। এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানির মধ্যে ওষুধের দামের ব্যবধান রাখা যাবে না। যৌক্তিক সমন্বয় থাকতে হবে। সরকারকে শক্ত হাতে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমরা মনে করি, দাম নির্ধারণের বিষয়টি যেহেতু ওষুধ প্রশাসনের আওতাধীন তাই ওষুধপত্রের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে তাদের এমন ভূমিকা থাকা উচিত, যাতে দেশের মানুষ সুলভে ওষুধ পেতে পারে। দেশের মানুষ যেন সুলভে ওষুধ পেতে পারে সে ব্যবস্থা থাকতে

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজায় আরও শতাধিক ফিলিস্তিকে হত্যা

খুলনার সড়কে ঝরল তিন প্রাণ 

ভারতের পুশইনকে উসকানি হিসেবে দেখছেন না স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

যুদ্ধবিরতিতে নয়, বন্দী বিনিময়ে সম্মত রাশিয়া-ইউক্রেন

মাইক্রোক্রেডিটের জন্য একটি আলাদা ব্যাংক তৈরি করতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা

রায়ে অসন্তুষ্ট আছিয়ার পরিবার, উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত