বগুড়ার নারী উদ্যোক্তা মেলায় একই ছাদের নিচে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন উদ্যোক্তারা
হাফিজা বিনা : দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই নাকে আসে খুব মুখরোচক সব খাবারের গন্ধ। কাছে গিয়ে দেখা মেলে অনেক ধরণের খাবার। কোনটাতে পিঠা, কোনটাতে পাকোরা, কোনটাতে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, আবার কোনটাতে আছে শীতের পিঠা।
মেলায় আসা দশনার্থীরা বিকেল বেলা স্ত্রী- সন্তান ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে এসে মজা করে এসব খাবার খাচ্ছেন। অনেকে সাথে প্যাকেটে ভরে নিয়েও যাচ্ছেন। হোমমেড খাবারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার ফসল বিভিন্ন পণ্যের স্টলেও চলছে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের আনাগোনা।
এই দৃশ্য এবং ক্রেতা বিক্রেতার হাক-ডাক এবং বস্ত্যতা চোখে পড়বে বগুড়া শহরের সাতমাথায় অবস্থিত পুলিশ প্লাজায়। গত শনিবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বগুড়া নারী উদ্যোক্তা মেলা ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পিঠা উৎসবে মোট ১৭টি স্টলে নারী উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যগুলো ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
সকালে ক্রেতা এবং বিক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও দুপুরের পর বেশ জমে উঠছে মেলার শহর বগুড়ার পুলিশ প্লাজার নারী উদ্যোক্তা মেলা। উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন হলেও এরই মধ্যে বেশ নজর কেড়েছেন সেলিনা আক্তার। তিনি কাজ করছেন বিভিন্ন ধরণের ব্যাগ, পাপোশ, থ্রিপিস এবং শতরঞ্জি নিয়ে। সেলিনা জানান, তার এই যাত্রা খুব বেশি দিনের না। তার স্বামী মো: রাসেলুর রহমান চাকরি করতেন একটি মোবাইল কোম্পানীতে।
চাকরিটা তিনি গত বছর ছেড়ে দেন তারপর স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলে চিন্তা করলেন, অনেক তো হলো এবার নিজেরা কিছু করবেন। অনলাইনে পেজ খুললেন বগুড়া শতরঞ্জি হাউজ। সারা পেলেন প্রথমেই। বর্তমানে তিনি অফলাইন এবং অনলাইন দু’ জায়গাতেই ভাল ব্যবসা করছেন বলে জানালেন।
আরও পড়ুন২০১৩ সাল থেকে হোমমেড খাবার নিয়ে কাজ করছেন শাম্মি আক্তার। সাথে কাজ করছেন পাটের পণ্য, তাঁত, বুটিকস নিয়ে। তার পেজের নাম ‘শাম্মি’স ফুড ড্রিম’। মেলার শুরুতেই তার স্টল। ক্রেতাদের শাম্মি তার হোমমেড খাবারসহ তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ধরনের খাবার বানিয়ে গরম গরম পরিবেশন করছেন।
ক্রেতারাও ব্যস্ত জীবনে একটু বাইরে এসে পছন্দের খাবারটি খেয়ে তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। শাম্মি জানান, উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রথমে একটু সমস্যা হলেও বর্তমানে তিনি একজন পুরোদস্তর উদ্যোক্তা।
মেলায় ঘুরতে আসা রইস উদ্দিন তার বন্ধু সাদাতকে নিয়ে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে নানা ধরণের পিঠা খাচ্ছিলেন। জানালেন, তার স্ত্রী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা। সময় পান না। প্রতিদিনের রুটিন মেইনটেইন করতেই তার অবস্থা খারাপ। তাই মা-দাদীর হাতে বানানো পিঠার স্বাদ নিতে মেলায় এসেছেন পিঠা খেতে। তিনি আরও জানান, স্ত্রী এবং মেয়ের জন্য কুশলি, চিকেন মমো কিনে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন।
আয়োজক কমিটির একজন কানন ইসলাম মলি, কাজ করেন ‘অর্গানিক হেয়ার অয়েল’ নিয়ে। তার পেজের এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম রূপকথা’স ওয়ার্ল্ড। তিনি জানান, খুব অল্প সময়ের নোটিশে এই মেলা করতে হয়েছে। ইনডোর এই মেলায় নতুন এবং পুরনো অনেক উদ্যোক্তা একসাথে তাদের পণ্য পরিচিতি এবং বিক্রি করতে পারছেন। তাদের দেখে অনেকেই উৎসাহিত হবে বলে আশা করেন।
মন্তব্য করুন