ভিডিও সোমবার, ১২ মে ২০২৫

ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

যুদ্ধ রোমান্টিক নয়, বলিউড মুভিও নয়

ছবি : সংগৃহিত,যুদ্ধ রোমান্টিক নয়, বলিউড মুভিও নয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের যেসব নাগরিক সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির সমালোচনা করছেন, তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মনোজ নারাভানে। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ কোনো রোমান্টিক ব্যাপার নয় এবং এটি বলিউডের ফিল্মের মতো উপভোগ্যও নয়।

সোমবার পুনে জেলায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনোজ নারাভানে। সেখানে তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় বসবাসরকারী লোকজন সারাক্ষণ একধরনের ট্রমা বা ভীতিতে ভোগেন। কারণ যুদ্ধের কারণে স্বজণের মৃত্যু এবং আশ্রয়হীন হয়ে যাওয়া তারা জন্ম থেকেই দেখে আসছেন।  

“যুদ্ধে যারা স্বজন হারান, তাদের সেই বেদনা, ভীতি পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বা পিএসটিডি বলে একটি মনোবিজ্ঞানে একটি টার্ম প্রচলিত আছে; যারা কোনো ভয়াবহ বা নিষ্ঠুর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন, তারা পিএসটিডিতে আক্রান্ত হন এবং ২০ বছর পর্যন্ত তাদের মধ্যে এই ট্রমা থেকে যায়। পিএসটিডিতে আক্রান্তদের মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।”

ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান বলেন যে সরকারের নির্দেশ পেলে এখনও তিনি যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত, তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি সবসময় কূটনীতিকে তার প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করেন।

“যুদ্ধ রোমান্টিক কোনো ব্যাপার নয়, আপনাদের বলিউডের মুভিও নয়। এটা খুবই গুরুতর একটি ব্যাপার। শেষ পন্থা হিসেবে যুদ্ধ বা সহিংসতা বেছে নেওয়া উচিত সেই সময়ে, যখন যাবতীয় কূটনীতি ব্যর্থ হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন যে এখন যুদ্ধের সময় নয়। যদিও কিছু নির্বোধ মানুষ আমাদের ওপর জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু এজন্য আমাদের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই।”

“এখনও অনেকে প্রশ্ন করছেন যে কেন আমরা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে গেলাম না। একজন সৈনিক হিসেবে, যদি আমার কাছে নির্দেশ আসে— তাহলে আমি যুদ্ধে যাব; কিন্তু আমার কাছে সেটি প্রথম পছন্দ হবে না।”

“আমার প্রথম পছন্দ হবে কূটনীতি; অর্থাৎ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা। এটি শুধু দুই বা একাধিক দেশের মধ্যে নয়, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও এর চর্চা থাকা উচিত। সহিংসতা কোনো সমাধান হতে পারে না।”

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

 

আরও পড়ুন

এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।

এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছে ৩১ জন এবং আহত হয়েছে ৫৭ জন।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করল পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ানি উল মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর।

এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। শনিবার থেকে কার্যকর হয় এই যুদ্ধবিরতি।

সূত্র : এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে রাত জেগে গ্রামবাসীর পাহারা

বগুড়ার শেরপুরে হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় আ’লীগের চার নেতা গ্রেফতার

বগুড়ায় ২শ’ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও টাকাসহ গ্রেফতার ২

২২ মে বাজারে আসবে নওগাঁর আম

বগুড়ার নন্দীগ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

আর্মি মেডিকেল কলেজ বগুড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি