ঈদের ছুটিতে উত্তরাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত

করেেতায়া ডেস্ক : ঈদের ছুটিতে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ হন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অপরও কমপক্ষে ২০ জন। গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, গোবিন্দগঞ্জে ঈদের ছুটিতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী, পথচারী, শিশু, সিএনজি চালক ও বাসের চেইন মাস্টার রয়েছেন।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের চাপড়িগঞ্জ নামক স্থানে নির্মাণাধীন রোড ডিভাইডারের সাথে ধাক্কা লগে পড়ে গিয়ে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী আনোয়ার-শারমিন নামের এক দম্পতি নিহত হয়েছেন। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলকুড়ি গ্রামে।
নিহত আনোয়ার হোসেন (৩০) কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার শিলকুড়ি ইউনিয়নের কাঠগিরি গ্রামের ইউসুফ আলীর পুত্র। স্ত্রী শারমিনসহ দু’জনেই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। তারা ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে মোটরসাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন।
পরদিন শুক্রবার (৬ জুন) সকালে পৌরশহরের চারমাথা মেড়ে দায়িত্বরত অবস্থায় গোবিন্দগঞ্জ ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় বাসের চেইন মাস্টার রইচ উদ্দিন (৬০) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরও দুইজন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সাঘাটা উপজেলার বারকোনা এলাকার এক পথচারী মারা যান।
একইদিন বিকেলে উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের বোগদহ কলোনী এলাকার গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ওয়াদুদ (৪০) ও শিশুযাত্রী আব্দুল্লাহ (৫) নিহত হন। এ সময় গুরুতর আহত হন আরও ৪ যাত্রী। নিহত সিএনজিচালক ওয়াদুদ বগুড়র শিবগঞ্জ উপজেলার পলাশী গ্রামের বাসিন্দা। শিশু আব্দুল্লাহ একই উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের তাইজুল ইসলামের ছেলে।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন পৃথক দুর্ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় একটি ট্রাকের সাথে যাত্রীবোঝাই অটোরিকশার সংঘর্ষে অটোরিকশা চালক এবং এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- গোমস্তাপুরের চৌডালা ইউনিয়নের বেনিচক গ্রামের আহসান হাবিবের ছেলে ও অটোরিকশার চালক জাহিদ হাসান(২৫) এবং বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ঘাটনগর গ্রামের মিঠুন আলীর ছেলে হাসান আলী (১২)। এ ঘটনায় আহত আরও ৫জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পলাশবাড়ী(গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের দোকানঘর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসচাপায় ব্যাটারচালিত অটোরকিশাচালকসহ ৩ জন নহিত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। গত শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এদুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- পলাশবাড়ী উপজলোর বতেকাপা ইউনিয়নের খামার নড়াইল গ্রামের নাছির উদ্দীনরে ছেলে অটোরকিশাচালক গনি ময়িা (৪০), সাজ্জাদ মিয়ার ছেলে লিয়াকত (১৮) এবং ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে ইবনুরুল (১৮)। আহত দুজনই অটোরকিশার যাত্রী হলেও তাদের পরচিয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
আরও পড়ুনপলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত র্কমর্কতা (ওসি) জুলফকিার আলী ভুট্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চতি করেন। এদিকে পলাশবাড়ীর ব্র্যাক মোড়ে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ২ জন নিহত ও আহত হয়েছে ২ জন। গত সোমবার বিকেলে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে নিহত হলেন রংপুরের কাউনিয়ার গোলাম রব্বানী (৪৫) ও রংপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পীরগঞ্জ উপজেলার নিজকাবিলপুর গ্রামের জয়নাল প্রামাণিকের স্ত্রী মোছাঃ ছফুরা বেগম (৫৫)। জানা যায়, সোমবার বিকেলে গোলাম রব্বানী মোটরসাইকেল নিয়ে রংপুরে যাওয়ার উদ্দশ্যে পলাশবাড়ীর ব্র্যাকমোড়ে পৌঁছলে অপর দিক থেকে জয়নাল তার স্ত্রীকে নিয়ে পলাশবাড়ী থেকে নিজ গ্রাম কাবিলপুরে যাওয়ার পথে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এঘটনা ঘটে।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন- পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী ভুট্টু। তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তারেক মাহমুদ উৎস (২৩) নামের এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। গত রোববার ঈদের সন্ধ্যা ৬টায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ উপজেলার নেংটিছেড়া ব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত উৎস রংপুর কোতোয়ালী থানার লালবাগ এলাকার নুরুজ্জামান বকুলের বিশ্ব বিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৬ বন্ধু ঈদের দিন সকালে তাদের রংপুরের বাড়িতে আসেন। ৬বন্ধু মিলে ঈদের পরদিন সকালে ৩টি মোটরসাইকেলে ঘুরতে যায় বিকালে রংপুরে ফেরার পথে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের উপজেলার নেংটিছেড়া ব্রিজ এলাকায় একটি ইঞ্জিন চালিত ভ্যানকে অভারটেক করতে গেলে রংপুর থেকে সৈয়দপুরগামী একটি অজ্ঞতনামা মিনিবাস মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধুকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে ঘটনাস্থলে তারেক মাহমুদ উৎস’র মৃত্যু হয়। অপর মোটরসাইকেলের বসে থাকায় বন্ধু জাকির হোসেন (২২) আহত হন।
রাজারহাট(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মটরসাইকেল মেকার বাবু সিং(৪২) নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে আরও ৪জন। ঘটনাটি ঘটেছে, ঈদের দিন শনিবার রাত ৯টায় কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজের পূর্বপাড়ে। নিহত মোটরসাইকেল মেকার বাবু সিং রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেকুরটারী তেলীপাড়া গ্রামের পল্টু সিং এর ছেলে।
অপর ২ আহত আরোহীর মধ্যে একই মোটরসাইকেলের আরোহী অনন্ত নামের এক যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোববার সকালে তাকে ঢাকায় পাঠান হয়েছে। রাজারহাট থানার দায়িত্বরত এসআই বিকাশ রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি কুড়িগ্রাম ও রংপুর কোতয়ালী দেখছে।
মন্তব্য করুন