ডাকসু নির্বাচন : এজিএস পদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পাঁচ প্রার্থী, কৌশল নাকি অসন্তোষ?
_original_1755975211.jpg)
সাকিব হাসান সজীব: আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্র সংগঠনগুলো প্যানেল ঘোষণা শেষ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)ও তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে সংগঠনটির ঘোষিত প্যানেলকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কারণ, একই পদে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। প্যানেলে ভিপি পদে মনোনয়ন পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং বাগছাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের। জিএস পদে রয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার। আর এজিএস পদে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুন।
কিন্তু এখানেই থেমে নেই গল্প। আশরেফা খাতুন ছাড়াও একই পদে বাগছাসের আরও চারজন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন—কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসিসর চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব সানজানা আফিফা অদিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব আশিকুর রহমান জীম এবং শাখার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম হাসিব।
কৌশলগত সিদ্ধান্ত নাকি অসন্তোষ?:
দলীয় সূত্র বলছে, কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় কয়েকজন নেতা অসন্তুষ্ট হয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে নামছেন। তবে বাগছাসের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিষয়টি কৌশলগত। তাদের দাবি, সংগঠনের একাধিক প্রার্থী যদি একই পদে লড়াই করে, তাহলে সেই পদে বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।
কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে বাগছাসের অনেক প্রার্থীর নিজস্বভাবে ভালো করার সক্ষমতা রয়েছে। তাই একাধিক প্রার্থী লড়লেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কিছু ক্ষেত্রে এটি সংগঠনের কৌশলগত সিদ্ধান্ত, আবার কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।”
জানা যায়, হাসিবুল ইসলাম মূলত দুই পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। একটি এজিএস অন্যটি মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে। প্যানেল সাজানোকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া তীব্র অসন্তোষ থেকেই এমনটা হয়েছে বলে জানা যায়।
আরও পড়ুনঅভিযোগের তীর নেতৃত্ব নির্বাচনে:
তবে সবাই এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। ঢাবি শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব আশিকুর রহমান জীম অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের উত্তরের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখতে কোরামবাজির আশ্রয় নিয়ে আমাকে মাইনাস করা হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলেছিলাম—জুলাই পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে যারা সক্রিয় থেকেছে, তাদেরই নেতৃত্ব দেওয়া হোক। ছাত্র সংসদ গঠনের সময় আমার মুখ্য সংগঠক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।”
জীম আরও বলেন, “আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে কোনো বাধা আমাকে থামাতে পারবে না। যেমনিভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় কোনো বাধাই আমাদের দাবিকে রুখতে পারেনি। ডাকসু নির্বাচনেও আমি শেষ পর্যন্ত লড়ব।”
সংকট নাকি শক্তির বহিঃপ্রকাশ?:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একই সংগঠন থেকে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন সাংগঠনিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। তবে বাগছাস নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী এটি কৌশলগত বৈচিত্র্য। বাস্তবে কৌশল কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে ছাত্ররাজনীতির মাঠের সমীকরণের ওপর।
ডাকসু নির্বাচনের আগে এজিএস পদে এই বাড়তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল বাগছাসের অভ্যন্তরীণ গতিবিধিই নয়, ছাত্ররাজনীতির জটিল বাস্তবতাও তুলে ধরছে। এখন দেখার বিষয়, বহুপাক্ষিক প্রার্থী কৌশল বাগছাসকে কতটা এগিয়ে নিতে পারে।
মন্তব্য করুন