পাটখাতে সুদিন আসুক
বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে পাটজাত পণ্য বা সামগ্রী উৎপাদন ছিল একক বৃহত্তম শিল্প। পাটকে সোনালি আঁশ বলা হতো। এ ছাড়া স্মর্তব্য, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট। কিন্তু ভারত ক্রমান্বয়ে এ দেশের পাট শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়।
নিজেরা বড় বড় পাটকল স্থাপন করে। আর আমাদের পাটকলগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যায়। আমরা মনে করতে পারি একাত্তরের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ পাট শিল্পের ওপর কুনজর পড়ে ভারতীয় আধিপত্য শক্তির। তাদের বর্ণচোরা এজেন্টরা এদেশের পাটগুদামগুলোতে আগুন দিতে থাকে। পাটকলে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে। উৎপাদন ব্যাহত করে।
ফলে ৭২-৭৪ সময়ে এ দেশের পাট শিল্প ভারতীয় আগ্রাসনের নীলনকশায় পতিত হয়। সে সময় ভারতীয় তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের নীলনকশা বাস্তবায়নে প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। স্রেফ ক্ষমতার লোভে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তারা ভারতের স্বার্থ হাসিলে সহায়তা করে যায়।
বাংলাদেশের কাঁচাপাট অত্যন্ত উন্নতমানের। সে সুবাদে বিশ্ববাজারে পাটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু কাঁচা পাট রপ্তানিতে নানা ধরনের বাণিজ্যিক বাধা আমাদের পাট শিল্পকে রপ্তানীমুখী পণ্য হিসাবে পুরনো গৌরব ফেরাতে পারেনি।
তবে আশার কথা সোনালি আঁশের সোনালি দিন ফেরাতে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য পাট শিল্পের বকেয়া ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্বে পাটের চাহিদা বাড়ায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে রেকর্ড ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। দেশ-বিদেশে পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। সোনালি আঁশে আবার সোনালি দিন ফেরার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষে বিধ্বস্ত দেশগুলোতে ত্রাণ সামগ্রী ব্যবহারে পাটের দড়ি ও বস্তার চাহিদা বেড়েছে। উড়োজাহাজ থেকে পাটের বস্তার মধ্যে খাবার সামগ্রী নিচে ফেলা হয়। পাটের সুতা দিয়ে শাড়ি, পাঞ্জাবির কাপড়, টুপি, জিন্স ও গরম কাপড় তৈরি হচ্ছে। বিশ্বখ্যাত বিলাস বহুল গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে পাট। উড়োজাহাজের ইন্টেরিয়রও তৈরি হচ্ছে পাট দিয়ে। পাট পাতার স্যুপ ও পাটের কফিন ইউরোপের দেশগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুনবিশ্বে পরিবেশ বান্ধব প্রাকৃতিক এই তন্তুর বহুমুখী ব্যবহার বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাঁধ বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাঁধ ও নদী ভাঙন রোধে পাটের বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাটের তৈরি বৈচিত্র্যময় পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে কয়েকগুণ। এর মধ্যে প্যাকিং সরঞ্জাম, স্মার্ট পাটের ব্যাগ, পাটের তৈরি টব, খেলনা, জুট ডেনিম, জুয়েলারি, ম্যাটস, স্যান্ডেল, বাসকেট আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।
পাটের ২২ জাতের সুতা রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৪ দেশে। বাংলার পরিবেশ বান্ধব পাট নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে গবেষণা চলছে। সম্প্রতি সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়। ওই সফলতার হাত ধরেই এখন বাংলাদেশের পাট বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির গাড়ি নির্মাণে, পেপার এবং ইনস্যুলেশন কাজে, জিও টেক্সটাইলে, ইনজেকশন মোল্ডিং প্রযুক্তির মাধ্যম পাট এবং প্লাস্টিক মিশিয়ে পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাটবীজ ও পাটের উৎপাদন বাড়াতে হবে। পাট চাষকে এ দেশের চাষিদের কাছে লাভজনক ফসলে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য পাটের অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য পাটকল চালু করার বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন