ভিডিও বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

হবিগঞ্জে সম্পূর্ণ কাজের আগেই বিল তুলতে গিয়ে ধরা প্রকৌশলী

হবিগঞ্জে সম্পূর্ণ কাজের আগেই বিল তুলতে গিয়ে ধরা প্রকৌশলী

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নের নামে অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলী আয়েশা আখতারের বিরুদ্ধে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৮৩ শতাংশ, অথচ দাপ্তরিক হিসাবেই প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে মাত্র ৬৫ শতাংশ। এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিল দেখে অনুমোদন না দিয়ে তা আটকে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবিড় রঞ্জন তালুকদার।

এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৪ (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় উপজেলা এলজিইডি।

তিনটি প্যাকেজের আওতায় এসব বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীর, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ও টয়লেট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। বরাদ্দ ছিল প্রায় ৮৯ লাখ টাকা। কাজ পান স্থানীয় ঠিকাদার মো. গোলাম ফারুক।

সরজমিনে তিনটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা যায় অসামঞ্জস্য চিত্র।

শিবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মাঝামাঝি। কিছুদিন কাজ করার পর বর্তমানে প্রায় এক বছর ধরে তা বন্ধ। অসম্পূর্ণ প্রাচীরে জমেছে শেওলা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেল চৌধুরী বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করে তাগিদ দেওয়ার পর এখন আবার কিছু ইট-বালি এনে রাখছে। কিন্তু কাজ করার কোনো খবর নাই। কাজ বন্ধ থাকায় পরিবেশ যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, তেমনি ছাত্র-ছাত্রীরাও সমস্যায় পড়ছে।

একই অবস্থা চৌধুরী হামদু মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। কিছু অংশে নতুন কাজ শুরু হলেও পুরনো কাজ ঝুলে আছে এখনো।

আরও পড়ুন

সীমানা প্রাচীরের গ্রিল ও গেটের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দেব বলেন, কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। কী কারণে কাজ করে না করে তা আমরা জানি না। আমাদেরকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি।

মিজাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা পারভীন বলেন, ‘আমার এখানে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ও টয়লেট নির্মাণ করার কথা। গত দুই বছরে শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষকের কক্ষের ছাদ ঢালাই হয়েছে। বাকি কিছুই হয়নি। আর টয়লেট নির্মাণ করা এখনো শুরুই হয়নি। শুরুতে নির্মাণ সামগ্রীর মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পে এ পর্যন্ত ৬২ লাখ টাকার নির্মাণকাজে বিল তোলা হয়েছে তিন ধাপে ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকৌশলী আয়েশা আখতার গত এপ্রিল মাসে আরো ২০ লাখ টাকার বিল উত্তোলনের অনুমোদন নিতে গেলে ইউএনও সেটি আটকে দেন। কারণ প্রকল্পের কাজ তখনও চলমান এবং দাপ্তরিক অগ্রগতি ছিল মাত্র ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া আরো দুটি কাজের জন্য অতিরিক্ত ২৭ লাখ টাকার বিলও একই সঙ্গে উপস্থাপন করেন তিনি।

এ বিষয়ে ইউএনও নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘আমার কাছে যখন বিলগুলি আসে, তখন আমি খোঁজখবর নিই। পরে জানতে পারি, কাজগুলো ৬৫ শতাংশের চেয়ে কম শেষ হয়েছে। যে কারণে নৈতিক দায়িত্ব থেকেই আমি বিলে সই করিনি। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অগ্রিম বিল অনুমোদন কোনোভাবেই ন্যায়সংগত নয়।

তিনি বলেন, সরকারি অর্থ জনগণের ট্যাক্সের টাকা, এটি যথাযথভাবে ব্যয় নিশ্চিত করতে আমরা দায়বদ্ধ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বদলি আদেশে উপজেলা প্রকৌশলী আয়েশা আখতার দ্রুত অফিস ত্যাগ করে চলে যান। এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি, পরে কথা বলব।

কাজের ঠিকাদার গোলাম ফারুক বলেন, শুনেছি কিছু অতিরিক্ত বিল ছিল। তবে ইউএনও চাইলে আংশিক বিল অনুমোদন দিতে পারতেন। উনি ক্ষোভ ও ক্ষমতা দেখিয়ে সব বিল ফেরত দিয়েছেন।

হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত বিল প্রদানের কোনো নিয়ম নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশীয় শিল্পে গরুর মাংস আমদানির প্রভাব

চট্টগ্রামে করোনায় এক নারীর মৃত্যু

চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্কাউটার রশিদ আর নেই

গাজায় ত্রাণের ট্রাক উল্টে কমপক্ষে ২০ ফিলিস্তিনি নিহত

হোয়াটসঅ্যাপের আনরিড সব মেসেজ দেখতে পাবেন এক ক্লিকে

নতুন নাটকে ইয়াশ-নীহা