ভিডিও মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

বেশি ঘটছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয়

বগুড়ায় সড়কে প্রাণহানি বাড়ছে

বগুড়ায় সড়কে প্রাণহানি বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় সড়ক-মহাসড়ক নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয় প্রাণহানি বাড়ছে। বগুড়ায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে কেউ না কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন। বাড়ি থেকে গন্তব্যস্থলে পৌছার গ্যারান্টি নেই। গন্তব্যস্থলে না পৌঁছেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে অনেকে। বিশেষ করে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।

সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে সাপের মত এঁকেবেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ‘হিরোগিরি’ করতে গিয়ে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে বহু কিশোর, তরুণ ও যুবা। এতে দিন যত যাচ্ছে দীর্ঘ হচ্ছে সড়কে মৃত্যুর মিছিল। থেমে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় আগামীর স্বপ্ন। এতো নিয়ম ও আইন তবুও থামানো যাচ্ছে না এই মৃত্যুর যাত্রা। এসব দুর্ঘটনায় প্রানহানিও ঘটছে, পাশাপাশি গুরুতর আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করছে অসংখ্য মানুষ। প্রিয়জন হারানো বেদনায় ভারি হয়ে উঠছে পরিবেশ।

সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলেন, মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়া, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, মোবাইল ফোনে চোখ রেখে চলাচল এবং যানবাহনে সংখ্যা বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। এর বাইরে রয়েছে মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর প্রবণতা, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনসাধারণের ওভারব্রিজ, ফুটপাত না মানা।

সেইসাথে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতা, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার, অপরিকল্পিত ও ভঙ্গুর সড়ক, ওভারক্রসিং, অতিরিক্ত গতি, ওভারব্রিজের স্বল্পতা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতি, অনিয়ম, বিপজ্জনক ট্রাক, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও চালক এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানো। এভাবে নানাবিধ কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।

গত ১৭ দিনেই বগুড়ায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। গত ১ মার্চ থেকে গতকাল সোমবার ১৭ মার্চ পর্যন্ত এই দুর্ঘটনা ঘটে। একই ধারাবাহিকতায় গতকালও বগুড়ার শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটর সাইকেল আরোহী আরও ২জন নিহত হয়েছেন। ছবি তুলে বাড়িতে ফেরার পথে শেরপুরে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

এ ঘটনায় সাগর নামের আরেক বন্ধু গুরুতর আহত হন। নিহতরা হলেনউপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিরইল গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে শেরউড ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) স্কুল এ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী কামরুল ইসলাম শুভ (২০) ও একই এলাকার সোলাইমানের ছেলে ছোনকা রহিমা-নওশের আলী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হৃদয় হাসান (২০)। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের রাজাপুর বিরইল এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য আরও দুর্ঘটনার মধ্যে গত ১২ মার্চ  শেরপুরে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ৩ বন্ধু নিহত হয়। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ধরমোকাম এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন বিকেলে তিন বন্ধু নাঈম, রিফাত ও সেলিম মোটরসাইকেল নিয়ে শেরপুরে যান।

এরপর ইফতারের সময় তারা দ্রুতগতিতে বাড়ির দিকে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ধরমোকাম এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পৌঁছানোর পর একটি প্রাইভেটকারকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে মোটরসাইকেল উল্টে যায়। মোটরসাইকেলে থাকা তিন বন্ধু মহাসড়কে ছিটকে পড়েন। এ সময় পেছনে থাকা একটি ট্রাক তাদের পিষ্ট করে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

গুরুতর আহত নাঈম, রিফাত ও সেলিমকে প্রথমে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক নাঈমকে মৃত ঘোষণা করেন। অচেতন সেলিম ও রিফাতকে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে সেলিমের মৃত্যু হয়। এছাড়া রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রিফাত মারা যান।

এদিকে, বগুড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় অটোভ্যানে থাকা মা-মেয়ে নিহত হয়েছেন। ১২ মার্চ দুপুরে দুপচাঁচিয়া উপজেলার বেড়াগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের ছাতুয়াপাড়া গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী রোকসানা পারভীন এবং তাদের তিন বছর বয়সী মেয়ে রাহিয়া৷  
গত ৯ মার্চ বগুড়া সদরের প্রথম বাইপাস মহাসড়কে তিনমাথা থেকে চারমাথার মাঝামাাঝি এলাকায় কল্পনা ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি পেছন থেকে একটি ট্রাকের চাপায় মোটর সাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহত হন। নিহতরা হলেন শহরের কাটনারপাড়ার সজল ও তার স্ত্রী হোসনে আরা।

১৩ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে শহরের চারমাথায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মোটর সাইকেল আরোহী আশরাফুল আলম জাফর নামে একজন নিহত হন। ১ মার্চ শিবগঞ্জ সদরে ইজিবাইক উল্টে আব্বাস ফকির নামে একজন নিহত হন। দৈনিক করতোয়াসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনায় সংবাদের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে বগুড়া সদর ট্রাফিক ফাঁড়ির ইনচার্জ টিআই (প্রশাসন) মো: সালেকুজ্জামান খান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সড়কের ধারে বাজার বসানো, ওভারটেকিং, ওভারস্পিড, ওভারলোড, চালকের উপযুক্ত প্রশিক্ষনের অভাব, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালাানো, রাস্তার নিমার্ণক্রটি, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জেব্রক্রসিং না থাকা, এবং জেব্রাক্রসিং গাড়ি চালক কর্তৃক না মানা, অরক্ষিত রেল ক্রসিং, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করে কথা বলা, মহাসড়কে ধীরগতি ও দ্রুতগতির যান একই সঙ্গে চলাচল, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, এবং মহাসড়ক ক্রসিং এ ফিডার রোডে যানবাহন উঠে যাওয়াই মূলত দায়ী।

এছাড়া বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালানো, হেলমেট ব্যবহার না করা, কার আগে কে যাবে এই প্রবণতা, এলোমেলোভাবে চালানোর জন্যও দুর্ঘটনা প্রাণহানি হচ্ছে। এতে বেশি মারা যাচ্ছে টিনএজরা। এজন্য অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। টিনএজদের মোটর সাইকেল কিনে দেয়া যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সড়ক দুর্ঘটনারোধে বিশ্লেষকরা আরও বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত কারা, সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রনয়ন করা,সড়ক মহা সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং, (ট্রাফিক চিহৃ) স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং অংকন, চালকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা,সড়কে চাঁদাবাজি, বন্ধ করা,গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা, পথচারী পারাপাররোধে মহাসড়কে রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উচু করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার কাহালুতে তারাবি নামাজ পড়ার সময় মুসল্লির মৃত্যু

সিরাজগঞ্জে ৮ বছরের শিশু ধর্ষিত

মুন্সীগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত ৩ ডিবি পুলিশ সদস্য

সবুর খান গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক (GEN) বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নিযুক্ত

আবারও সোনার দামে নতুন রেকর্ড 

চাঁদপুরে যুবককে হত্যার অভিযোগে মা-মেয়ে গ্রেপ্তার